সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনাঃ
নেত্রকোনায় বোরো ফসল হারানো নিঃস্ব কৃষক আমন ধানে স্বপ্ন বুনেছিলেন। এই আমন ধানের বাম্পার ফলনে তাদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। এতে কিছুটা হলেও গত বছরের বোরো ফসলহানির ক্ষতি পূরণ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। গত এপ্রিল থেকে একে একে হাওর ডুবিতে বোরো ফসলহানির ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নগদ টাকা ও চাল দিয়ে সহায়তা করে সরকার। এছাড়া আরো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করে। এতে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। এদিকে, বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর কর্ম-তৎপরতার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন কৃষকরা। যে কারণে বোরো ফসল হারানো কৃষকরা আমন চাষে এবার আরো বেশি উদ্যোগী হয়ে উঠেন। বারহাট্টা উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আমন ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উৎসাহী করেন।
কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানামুখি প্রচেষ্টা ও পরামর্শে এবার উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন হয়। জমি চাষের উপযোগী কোন জায়গা বাদ পড়েনি। অন্য বছরের তুলনায় এবার বারহাট্টায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। অপর দিকে মোহনগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ছোট-ছোট হাওরের জমিতে পাকা ও আধা পাকা সোনালী ধান বাতাসের তালে তালে দুলছে। ধানের গন্ধ চারদিক ছড়িয়ে পড়েছে। জমিতে উৎপাদিত ধানের বাম্পার ফলন দেখে আনন্দ ও তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে কৃষক-কৃষাণীর মুখে। শুধু তাই নয়, এবার আমনের বাম্পার ফলন দেখে স্থানীয় সর্বস্তরের জনতার মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নেত্রকোনার প্রতিটি হাওরে আমন ধান কাটার ধুম পড়েছে। মনের আনন্দে সোনালী ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। কিছু জমির মালিক অন্য শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটালেও অনেক জমির মালিক নিজেই তাঁর পরিবারের লোকদের নিয়ে ধান কাটছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সরকারি ভাবে আমন ধান কাটার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সরেজমিনে বারহাট্টা ও মোহনগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের হাওরে গিয়ে দেখা যায়, জমির মালিকরা শ্রমিকদের নিয়ে নিজে মনের আনন্দে ধান কাটছেন। কৃষকরা বলেন, এবার জমিতে ভাল ধান হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের টার্গেট এর চেয়েও বেশি আমন ধানের ফলন হয়েছে।এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে উপসী জাতের উন্নত জাতের ধান আবাদ করায় অন্য বছর থেকে ভাল ফলন হয়েছে।
এ ব্যাপারে বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান বলেন, এবার বোরো ফসলহানির পর আমরা আমন আবাদে কৃষকদের উৎসাহী করি। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আমাদের পরামর্শ নিয়ে উফসী জাতের উন্নত প্রযুক্তির ধান জমিতে আবাদ করে ভাল ফলন পেয়েছেন। এবার লক্ষ্যমাত্রার অধিক আমন হয়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে এবার কৃষকরা তাদের গোলায় বাম্পার আমন ধান তুলতে পারবেন।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, এবার নেত্রকোনায় আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় কৃষকদের সাহস যুগিয়েছে। এতে বোরো ফসলহানির ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে।
Leave a Reply